ফারুকীর ‘ডুব’ নিষিদ্ধ এবং ফিল্ম সেন্সরশিপ আইনের ভুমিকা

ফারুকীর ‘ডুব’ নিষিদ্ধ হওয়ায় মিডিয়া আঙ্গন এখন বেশ গরম। ফেসবুক, টুইটারেও এর আলোচনা বেশ চোখে পড়ার মতো। যেহেতু আমি ফিল্ম সেন্সরশিপ আইন নিয়ে গবেষণা করছি উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য তাই এ বিষয়ে একটু না লিখেই নয়। প্রথমে একটু বলতে চাই ফিল্ম সেন্সরশীপ বোর্ড নিয়ে। আমরা যদি কোন ফিল্ম বাংলাদেশে প্রদর্শন করতে চাই, তাহলে এটা ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডে পাঠাতে হবে। ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের সদস্যরা ফিল্মটা দেখে বা পরীক্ষা করে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কোন উপাদান (যা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ কোড ১৯৮৫ তে উল্লেখ আছে) পেলে তা কর্তন করার জন্য পরিচালকের কাছে ফেরত পাঠাবে। ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের সদস্যরা ফিল্মটা পরীক্ষার পর যদি নিষিদ্ধ উপাদান (যেমনঃ অশ্লীলতা, পর্ণ দৃশ্য ) অনেক বেশী পরিমাণে পেলে এবং যদি ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের সদস্যরা মনে করেন যে এসব দৃশ্য কর্তন করার পরও ফিল্মটা বাংলাদেশে প্রদর্শনের উপযুক্ত নয়, তবে উক্ত ফিল্মটা প্রদর্শনের অনুপযোগী (ব্যান) বলে গেজেটের মাধ্যমে ঘোষণা দিবেন (যেমনঃ আড়াল, ধ্বংস মানব, ভালোবাসা ১৬ আনা নিষিদ্ধ হয়েছিল )।

ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের সদস্যরা ফিল্মটা দেখে বা পরীক্ষা করে আইন দ্বারা নিসিদ্ধ কোন উপাদান না পেলে অনুমতি পত্র (যেটা নো অব্জেকশন লেটার নামে পরিচিত) দিবে। এই অনুমতি পত্রের অর্থ হল উক্ত ফিল্মটি প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হল। ফারুকীর ‘ডুব’ ফিল্মটি সেন্সরশিপ বোর্ডের এই অনুমতি পত্র পেয়েছে কিন্তু অনুমতি পত্র পাওয়ার পরদিন তথ্য মন্ত্রণালয় তা স্থগিত করে, ফিল্মটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কনিষ্ঠ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের চিঠির উপর ভিত্তি করে ফিল্মটি স্থগিত করা হয়েছে। মেহের আফরোজ শাওন তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, উক্ত ফিল্ম এর মূল প্রতিপাদ্য হলো কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জীবনের একটি অংশ এবং স্পর্শকাতর একটি অংশ, যা প্রদর্শিত হলে তার পরিবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন।

চলচ্চিত্রটিতে এক চলচ্চিত্র নির্মাতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় তারকা ইরফান খান। তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী। আর মেয়ের চরিত্রে অভিনেয় করেছেন তিশা। চলচ্চিত্রটির কাহিনিতে মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে ইরফান খানের বিয়ে হয় বলে জানা যায়। ওই চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্ণো মিত্র।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনেও এমন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেন যেখানে তার কন্যা শীলা আহমেদের বান্ধবী মেহের আফরোজ শাওন-এর সঙ্গে প্রণয় থেকে পরিণয় ঘটে তার। সিনেমাটি কি তাই পরোক্ষভাবে হুমায়ূন-এর জীবনকেই অনুসরণ করছে না? এ প্রসঙ্গে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আরে ভাই, মেয়ের বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে কি অমিতাভ বচ্চনের ‘নিঃশব্দ’ মুভিতে নাই? ‘আমেরিকান বিউটি’তে নাই? ‘পয়েজন আইভি’তে নাই? এটা কী কথা?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কথার উপর ভিত্তি করে তাই আমি বলতে পারি, এ রকম গল্প আরও অনেক ফিল্মে আছে এবং যেহেতু ফিল্মটি ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের অনুমতি পেয়েছে, তাই এটা বলা যায় যে ফিল্মটি ফিল্ম সেন্সরশিপের সাথে সম্পৃক্ত কোন আইন (চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন ১৯৬৩, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বিধিমালা ১৯৭৭, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ কোড ১৯৮৫) লঙ্ঘন করে নাই। এখন প্রশ্ন হল সেন্সরশিপ বোর্ডের অনুমতি পাওয়ার পরও কি তথ্য মন্ত্রণালয় ফিল্মটি নিষিদ্ধ করতে পারে? এর কি কোন আইনগত ভিত্তি আছে? উত্তর হলো ‘হ্যাঁ পারে’ এবং এর ‘আইনগত ভিত্তি আছে’। কারণ আইন তথ্য মন্ত্রণালয়কে এই অধিকার দিয়েছে। চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন ১৯৬৩ এর ১১ ধারা অনুসারে সরকার যেকোন ফিল্ম নিষিদ্ধ করতে পারে, যদিও ফিল্মটির সেন্সরশিপ বোর্ডের অনুমতি থাকে। আবার কোন ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের আনুমতি না পেলেও, এই ধারার অধীনে সরকার তা প্রদর্শনের অনুমতি দিতে পারে।

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

গবেষক, পিএইচ. ডি ফেলো
আইন বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি মালেয়শিয়া এবং
শিক্ষক, আইন বিভাগ, ইসলামিক ইউনিভারসিটি মালদ্বীপ
Email: zahidulislamiium@yahoo.com