১৯৯৮ সালের কথা। আমি তখন কামরুননেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। যেহেতু পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবো তাই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জুন মাসে টিকাটুলী ই-হক কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। ১লা জুন আমাদের ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। কোচিং ক্লাসের প্রথমদিনই একটি ছেলে আমাকে প্রচন্ডভাবে আকৃষ্ট করে ফেলে। আর তাই আমি আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সাথীর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওর নাম দুর্জয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ফার্স্ট বয়। আমাদের কোচিং ক্লাস প্রতিদিন সকাল ৮টায় শুরু হতো। প্রতিদিনই দুর্জয় ক্লাস শুরুর সময় আসতো আর ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র চলে যেতো। আমাদের ব্যাচের ছেলেদের সাথে দুর্জয় কথা বললেও পারত পক্ষে মেয়েদের সাথে কথা বলতো না। কোচিং ক্লাসে দুর্জয়ের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন আর সবাইকে সহযোগিতা করার মনোভাব আমাকে মুগ্ধ করে ফেলে। সময়ের পরিক্রমায় একসময় আমাদের এসএসসি পরীক্ষার সময় এসে যায়। আর তাই কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে ২০০০ সালের ২৭শে ফেব্রæয়ারী আমাদের জন্য একটি বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
সেদিন আমাদের সবার প্রিয় ইমাদুল হক স্যার মডেল টেস্ট এ মেধাস্থান অধিকারকারীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন। আমাদের কোচিং সেন্টারের ছেলেদের মধ্যে প্রথম হয়ে দুর্জয় এবং আমি মেয়েদের মধ্যে ৭ম হয়ে পুরষ্কার লাভ করি। কোচিং এ বিদায়ের দিন দুর্জয় আমাদের ব্যাচের প্রত্যেককে শুভেচ্ছা উপহার দিয়েছিল। দুর্জয়ের উপহার পেয়ে আমি এত খুশী হয়েছিলাম যে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না! কোচিং এ বিদায়ের দিন আমি দুর্জয়কে আমার বাসার ঠিকানা দিয়ে বাসায় আসতে বলেছিলাম। কিন্তু দুর্জয় আমার বাসায় আসেনি আর এরপর ওর সাথে আমার কোনদিন দেখাও হয়নি। পরে অবশ্য মাসুম নামে আমাদের ব্যাচের এক ছেলের কাছে শুনেছিলাম দুর্জয় ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজে ভর্তি হয়েছে। এরপর আজ কতদিন পেরিয়ে গেছে।আজও আমি দুর্জয়কে ভুলতে পারিনি। কারণ দুর্জয়কে আমি খুব খুব ভালোবাসি। জানি না দুর্জয়ের চোখে এ লেখাটি পড়বে কিনা। যদি পড়ে তাহলে অনুরোধ দুর্জয় অন্তত একটিবারের জন্য হলেও তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করো। আমি আজও তোমারই প্রতীক্ষায় আছি।
————
শামীমা আক্তার উর্মি
৯৪,শরৎগুপ্ত রোড
নারিন্দা,ঢাকা।